(ফেসবুকে ২৮/১১/২০২০ তারিখে প্রকাশিত)
আলোচনার সূত্রপাত সহকর্মী পার্থ'র সাথে এক আড্ডা থেকে। পার্থকে ধন্যবাদ প্রশ্নটা তোলার জন্য।
১.
আমি তখন একটা অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো চাকরি করি। একদিন বস বললেন সিআরএম এ আরো লোক দরকার, কিছু সিভি যোগাড় করেন। আমি এরে ওরে বলে ১২ টার মতো সিভি পাইলাম, তার মধ্যে ৭ টা মেয়ে আর ৫ টা ছেলে। তারপর একদিন বস ফোন দিয়ে বলে সিভি কয়টা পাইছেন।
আমি বললাম ১২ টা।
ছেলেদের কয়টা?
৫ টা।
এই ৫টা সিভি নিয়ে আমার চেম্বারে আসেন।
এই ব্যাপারটা ছিলো প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। বেসরকারী চাকরীতে নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান, কিংবা গায়ের রং কেন্দ্রিক বৈষম্যগুলো বেশ প্রকটভাবে থাকলেও বেশিরভাগ সময় ব্যাপারটা চেপে যাওয়া হয় বা পুরাপুরি উপেক্ষিত হয়। মূল সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য যে হচ্ছে তা প্রমাণ করা কঠিন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য কি আদৌ প্রমাণ করা সম্ভব? যদি সম্ভব হয় তাহলে কিভাবে?
দুইটা দৃশ্যকল্প চিন্তা করি।
দৃশ্যকল্প ১: আমি বের করতে চাচ্ছি চাকরীর বাজারে ছেলে মেয়ের মধ্যে বৈষ্যমের হার কতো। ধরলাম ওই ১২ টা সিভি আমার নমুনা। ৫ টা ছেলেদের সিভি থেকে যদি ৩ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় তাহলে ডাক পাওয়ার হার ৩/৫ অথবা ৬০%, অপরদিকে মেয়েদের ডাক পাওয়ার হার হবে ০%। কিন্তু তাহলে প্রশ্ন থাকে আসলেই কি সবগুলো সিভি একই মানের ছিলো? যদি একই মানের না হয়, যদি ওই সিভিগুলোতে ছেলেদের যোগ্যতা মেয়েদের চেয়ে আসলেই বেশি হয় তাহলে তো তাদের ডাক পাওয়ার কথাই না। অর্থাৎ এখানে কিছু কিছু চলক আছে যেগুলোর কারণে প্রকৃত বৈষম্যটা বের করা সম্ভব হবে না। অর্থমিতিতে এটাকে বলে উপেক্ষিত চলকজনিত পক্ষপাত (Omitted Variable Bias)।
দৃশ্যকল্প ২: এবার আমি প্রথমে পাওয়া ১২ টা সিভি থেকে ২টা মেয়ের সিভি বাদ দিলাম। বাকি থাকলো ৫ টা ছেলে আর ৫ টা মেয়ের সিভি। এখন সবগুলো থেকে নাম বাদ দিয়ে দিলাম, কিংবা ছেলে মেয়ে বোঝা যায় এমন সবকিছুই বাদ দিলাম। তারপরে ওই নামবিহীন ১০ টা সিভিতে দৈবভাবে ৫টা ৫টা করে ছেলে মেয়ের নাম বসালাম। এরপরে এই ১০ টা সিভি থেকে আমার বস ঠিকই মেয়েনামধারী সিভিগুলা বাদ দিয়ে দিলেন। কিন্তু দেখা গেলো যে ৩ টা সিভি থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলো সবগুলোই আসলে মেয়ের। তাতে কি প্রমাণ হয়? বৈষম্য আছে? ধরলাম ওই ৩ টা সিভির সবাই বুয়েটের সিভিল থেকে পাস করা আর বাকি ৭ টা ঢাবির ফিন্যান্সের, আর আমার বসও বুয়েটের। এই কারণে তার পছন্দও বুয়েটের ছেলেপেলে। অর্থাৎ দৃশ্যকল্প ১ এর মতো এখানেও একটা উপেক্ষিত চলকজনিত পক্ষপাত থেকে যাচ্ছে।
তাহলে এই পক্ষপাত বাদ দেয়ার উপায় কি?
২.
চাকরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাদা আমেরিকান আর আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যকার বৈষম্য নিয়ে ২০০৪ সালে ম্যারিয়্যান বার্টার্ন্ড আর সেন্ধিল মুলাইনাথান নামের দুজন অর্থনীতিবিদ আমেরিকান ইকোনোমিক রিভিউতে খুব চমৎকার একটা প্রবন্ধ লেখেন। তাদের প্রশ্ন ছিলো একজন সাদা আমেরিকান আর একজন আফ্রিকান আমেরিকান যদি একই পদে চাকরীর জন্য আবেদন করেন তাহলে আফ্রিকান আমেরিকান কি কোন ধরনের বৈষম্যের স্বীকার হবেন? তাদের পাওয়া উত্তর হচ্ছে হ্যা, আফ্রিকান আমেরিকান যদি ১০ বার সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পান তাহলে সাদা আমেরিকান ডাক পান ১৫ বার। অর্থাৎ শুধুমাত্র গায়ের রং সাদা হওয়ার জন্য তার চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০% বেড়ে যাচ্ছে। তাদের গবেষণায় আরো দেখা যায় যে বিভিন্ন যোগ্যতা বৃদ্ধি পেলেও শ্রম বাজারের এই বর্ণগত বৈষম্য থেকে তারা মুক্তি পাচ্ছেন না।
এ ধরনের গবেষণার মূল দুর্বলতাটা দৃশ্যকল্প ১ আর ২ এ বলা হয়েছে। আমার সামনে দুটো দল। এক দল সাদা আমেরিকান, আরেক দল আফ্রিকান আমেরিকান। আমি জানতে চাই ১০০ জন সাদা আমেরিকান চাকরীতে আবেদন করলে কতোজন ডাক পান আর ১০০ জন আফ্রিকান আমেরিকান আবেদন করলে কতোজন ডাক পান। দুই দলের ডাক পাওয়ার যে পার্থক্য সেটা পরিসংখ্যান তত্ব অনুযায়ী তাৎপর্যপূর্ণ পাওয়া গেলে আমি বলবো যে শ্রম বাজারে একটা প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য আছে। কিন্তু এখানে শর্ত হচ্ছে দুইটা দলের পার্থক্য শুধুমাত্র একটা চলকের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে। চলকটা হচ্ছে গায়ের রং। যদি গায়ের রং এর সাথে সাথে দেখা যায় যে সাদাদের মধ্যে ৬০% কলেজ ডিগ্রিধারী আর আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে কলেজ ডিগ্রিধারী মাত্র ১০% তাহলে আমার পুরো গবেষণাই মাটি। কিন্তু বাস্তব জীবনে এটা কিভাবে সম্ভব? বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব না। পুরোপুরি একই রকম ১০০ জন সাদা আমেরিকান আর ১০০ জন আফ্রিকান আমেরিকান, যাদের মধ্যে বর্ণের বিভেদ ছাড়া আরো কোন পার্থক্য নাই, এমন দুটো গ্রুপ পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।
বার্টার্ন্ড আর মুলাইনাথান ওই অসম্ভবের পথে হাটেন নি। তাদের গবেষণার রূপরেখাটা অনেক বেশি সহজ আর সুন্দর। তারা প্রথমে প্রায় ৫০০০ নামবিহীন সিভি তৈরী করলেন। সিভিগুলো হুবহু এক না তবে প্রায় কাছাকাছি। অর্থাৎ একজন হার্ভার্ড হলে আরেকজনের ডিগ্রী এমআইটির এই রকম। এই ৫০০০ সিভির নামের জায়গায় পুরোপুরি দৈবভাবে অর্ধেক দেয়া হলো সাদা আমেরিকানদের মধ্যে প্রচলিত নাম আর বাকি অর্ধেকে দেয়া হলো আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে প্রচলিত নাম। যেমন এমিলি, জিওফ্রে, ম্যাথু এরা হচ্ছে একটা গ্রুপ আর লাকিশা, টাইরন, লিরয় এরা আরেকটা গ্রুপ। এরপর এই সিভিগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত ১৩০০ এর উপরে বিজ্ঞাপনের বিপরীতে মেইল করা হয়। অর্থাৎ প্রতি চাকরীর বিজ্ঞাপনের জন্য পাঠানো হয় প্রায় ৪ টা করে সিভি। এই ৪ টা সিভির মধ্যে ২ টা ছিলো সাদা আমেরিকান নামের আর ২ টা আফ্রিকান আমেরিকান নামের। বিজ্ঞাপনের বিপরীতে পাঠানো এই ২ টা ২ টা সিভির মধ্যে একমাত্র পার্থক্য ছিলো তাদের বর্ণভিত্তিক নাম। বাকি যোগ্যতা, যেমন: কলেজের র্যাংকিং, পূর্বে কাজের অভিজ্ঞতা, কম্পিউটার দক্ষতা, বিদেশী ভাষায় দক্ষতা, মিলিটারি অভিজ্ঞতা ইত্যাদি একদম একই। ফলাফল হচ্ছে: সাদা আমেরিকান নাম দিয়ে পাঠানো ২৪৩৫ টা সিভির বিপরীতে ডাক আসলো ২৩৫ বার, আফ্রিকান আমেরিকান নামযুক্ত একই সংখ্যক সিভির বিপরীতে ডাক আসলো ১৫৭ বার।
বিভিন্ন ধরনের পলিসির প্রভাব বিশ্লেষণে এই ধরনের গবেষণা রূপরেখার একটা গালভরা নাম আছে - Randomized controlled trial, সংক্ষেপে RCT। নতুন ওষুধের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য আরসিটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা কারণ এর মাধ্যমে নিরূপকের পক্ষপাত সবচাইতে কমানো সম্ভব। বার্টার্ন্ড আর মুলাইনাথানের পেপার থেকে যেমন বোঝা যায় যে শুধুমাত্র বেশি বেশি ট্রেইনিং প্রোগ্রাম দিয়ে শ্রমবাজারের বর্ণবৈষম্য দূর করা সম্ভব না তেমনি আরো অনেক পলিসির দুর্বলতা (শ্রমবাজারে কোটার দরকার আছে কি নাই) চিহ্নিত করা সম্ভব আরসিটি ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে।
পেপারের লিংক দিলাম। পড়ে ফেলেন।
(সচলায়তনে ০৮/০১/২০১০ তারিখে প্রকাশিত)
১.
deleted
২.
একটা ছেলের একটা মেয়েরে পছন্দ করার এক কোটি কারণ থাকতে পারে। কিন্তু প্রথম কারণটা সম্ভবত চেহারা। কারণ এইটা দূর থিকা দেখা যায়। এখন কথা হইলো ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটারে সব ছেলে ভালোবাসার প্রস্তাব কেন দেয় না। গোপন ফ্যান্টাসী যে থাকে সেইটা আমি জানি কিন্তু প্রস্তাব কেন দেয় না? প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়ে? সেটা হতেই পারে, কিন্তু আগে থেকে ছেলেরা জানে কিভাবে যে সে প্রত্যাখ্যাত হবে?এখন আসেন আমরা একটা পরিস্থিতি কল্পনা করি যেখানে আমাদের ক্লাসে ১৮ টা ছেলে আর ১৮ টা মেয়ে। আমার ওই মেয়েকে যেমন ভালো লাগছিলো ক্লাসের অন্য ১৭ টা ছেলেরও ওরে তেমনি ভালো লাগতো। ধরলাম সব ছেলেই ঠিক করলো ওরে প্রস্তাব দিতে হবে। কিন্তু দুইটা শর্ত মাইনা:
• যারা প্রত্যাখ্যাত হবে তারা ক্লাসের অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারবে না (বিকল্প পছন্দ হতে কোন মেয়ে পছন্দ করে না)।• যারা প্রস্তাব দেবে তারা আর পরস্পর বন্ধু থাকতে পারবে না (যে বন্ধু বন্ধুর পথে বাধা সৃষ্টি করে সে প্রকৃত বন্ধু না)।
এবং এইটা ধইরা নেয়া যায় যে ওই মেয়ে কারো প্রস্তাবে রাজী হতেও পারে নাও পারে। কাজেই ঘটনা দাড়ায় আমি যদি ওরে প্রস্তাব করি তাহলে দুই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হইতে পারে:সে প্রস্তাবে রাজী হইলে:>>পাইলাম>>অন্য বন্ধু যেগুলা ওরে প্রস্তাব দেবে সেগুলা আর আমার বন্ধু থাকবে না (১৭ জনই)।
সে প্রস্তাবে রাজী না হইলে:>>পাইলাম না>>অন্য বন্ধু যেগুলা ওরে প্রস্তাব দেবে সেগুলা আর আমার বন্ধু থাকবে না।অর্থাত দুইটা পরিস্থিতিতেই আমার কোন বন্ধু নাই। এখন আমি কি করবো? ওরে প্রস্তাব দিলে আমিও ওরে পাইতেও পারি নাও পারি, কিন্তু প্রস্তাব দিয়া প্রত্যাখ্যাত হইলে আমি সব হারাবো।
এই পরিস্থিতিতে আসেন আমরা নায়িকা#২ কে নিয়ে আসি। সে সেইরকম সুন্দরী না হইলেও সুন্দরী, আর সে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকায়। ক্লাসের জরিপে অর্ধেক ছেলে মনে করে তাকে প্রস্তাব দেয়া যায়। এখন নায়িকা#২ কে প্রস্তাব দিলে কি পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে:সে প্রস্তাবে রাজী হইলে:>>পাইলাম>>অন্য বন্ধু যেগুলা ওরে প্রস্তাব দেবে সেগুলা আর আমার বন্ধু থাকবে না (৮ জন)।>>আমার ৯ বন্ধু যারা #২ এ প্রতি আগ্রহী না তাদের সাথে বন্ধুত্ব থাকবে।সে প্রস্তাবে রাজী না হইলে:>>পাইলাম না>>অন্য বন্ধু যেগুলা ওরে প্রস্তাব দেবে সেগুলা আর আমার বন্ধু থাকবে না।>>আমার ৯ বন্ধু যারা #২ এ প্রতি আগ্রহী না তাদের সাথে বন্ধুত্ব থাকবে।অর্থাত এই পরিস্থিতি আমার জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো। নায়িকা #২ যাই করুক আমার ৯ জন বন্ধু থেকেই যাচ্ছে।
এখন কথা হচ্ছে ক্লাসে ১৮টা ছেলে ১৮টা মেয়ে, ছেলে মেয়ে অনুপাত ১:১, তারপরও এতো সমস্যা কেন।
৩.
উপরে দেয়া উদাহরণটা ক্যাজুয়াল সেক্সের ক্ষেত্রে বেশী প্রযোজ্য। পার্টিতে গিয়ে সেই মেয়েটাকেই ডেটের প্রস্তাব দেয়া উচিত যার চারপাশে উত্সুক জনতার ভীড় কম। এক্ষেত্রে সফল ডেটের সম্ভাবনা বাড়ে।
এটা একইসাথে Simultaneous Game এর একটা উদাহরণ। যেখানে সব খেলোয়াড় অপর খেলোয়াড়দের স্ট্রাটেজী না জেনে সিদ্ধান্ত নেন। সেরা সুন্দরীকে প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে আমি দ্বিতীয় সেরা সুন্দরীকে পাওয়ার সম্ভাবনাটা যেমন কমিয়ে দিচ্ছি তেমনি আমার বন্ধুদেরকে সরিয়ে দিচ্ছি। সাথে সাথে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছি যাতে অন্য বন্ধুরাও সুন্দরীকে প্রস্তাব দেয়ার আগে দুবার ভাবে। আর আমি যদি আমার দিকে আড়চোখে তাকানো সুন্দরীকে প্রস্তাব দেই তাহলে আমার সফল প্রেম হবার সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে তেমনিভাবে ক্লাসের অন্য কারো ভাগ্যে সেরা সুন্দরীকে পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। অর্থাত আমি সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করলেই পুরো ক্লাসের যেমন লাভ হচ্ছে তেমনি আমার নিজেরও ক্ষতি কম হচ্ছে।
এ্যাডাম স্মিথের মতে প্রতিটি ব্যক্তির নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করাটাই সমাজের জন্য সর্বোত্তম। জন ন্যাশ এ্যাডাম স্মিথের এই এই নিজের স্বার্থ ধারণার সাথে যোগ করেন সামষ্টিক স্বার্থের ধারণা। তিনি দেখান নিজের স্বার্থের সাথে সাথে সমষ্টিগত স্বার্থ বিবেচনা করলে নিজের যেমন লাভ হবে তেমনি সামষ্টিক লাভও বৃদ্ধি পাবে। খুব সহজভাবে দেখলে বাসে ঠেলাঠেলি করে উঠলে নাকি লাইন দিয়ে উঠলে কোনটাতে লাভ বেশী?
ধরা যাক আমি বিশাল একটা লাইনের পেছনদিকে। এখানে দাড়িয়ে থাকলে আমার বাসে উঠতে সময় লাগবে প্রায় আধ ঘন্টা। এখন লাইন ভেঙ্গে আমি সামনে গিয়ে কিছু যাত্রীর সাথে ঠেলাঠেলি করে বাসে ওঠার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু একজন লাইন ভাঙ্গার মানে হচ্ছে পুরা লাইনটাই বিশৃঙখল হয়ে যাবে, এবং তখন সবাইকেই ঠেলাঠেলি করে উঠতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি আধ ঘন্টা কি এক ঘন্টা পরেও যে বাসে উঠতে পারবো তার কোন নিশ্চয়তা নাই। কাজেই দেখা যাচ্ছে লাইনে দাড়ানোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক দুই দিক থেকেই আমি লাভবান হচ্ছি।
৪.
১৯৪৪ সালে ভন নিউম্যান আর অস্কার মর্গেনস্টার্ন গেম থিওরীর উপর প্রথম বই প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত আটজন অর্থনীতিবিদ আর গণিতবিদ গেম থিওরীর উপর গবেষণার জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। আমাদের চারপাশে গেম থিওরীর প্রয়োগ প্র্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই। পাড়ার মুদি দোকানী কয় কেজি চাল দোকানে রাখবে এটা থেকে শুরু করে আগামী বছর ট্যাক্সের হার কত হবে সব কিছুই গেম থিওরী দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসায়, বায়োলজী, কম্পিউটার সায়েন্স সব কিছুতেই এখন গেম থিওরীর প্রয়োগ। শেষে আমার খুব প্রিয় একটা ক্লিপ দিলাম। জন ন্যাশের জীবনী নিয়ে বানানো এ বিউটিফুল মাইন্ড মুভির এই সিনে তরুণ জন ন্যাশ তার বন্ধুদের কিভাবে ক্লাবে আসা সুন্দরীগুলোকে নিয়ে বিছানায় যাবার সম্ভাবনা বাড়ানো যায় সেটা গেম থিওরী দিয়ে ব্যাখ্যা করছেন।
(সচলায়তনে ২৮/০২/২০০৮ তারিখে প্রকাশিত)
আগামী মাসে ক্লেমেন্জার জরুরীভিত্তিতে দুটো পুরোন গাড়ী দরকার। পরবর্তী অপারেশনটা দলের জন্য খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ীদুটো দেখতে পুরোন হলেও জরুরী সময়ে যেন আবার বিগড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। লিটল ইটালীতে পুরোন গাড়ির দোকান আছে দুটো। এর মধ্যে শহরের উত্তরে রিচি নবিলোর দোকানটা বেশ ভালো গাড়ী রাখে। তবে সমস্যা হচ্ছে ওকে তেমন বিশ্বাস করা যায় না। আবার দক্ষিণ দিকের ফ্যাট টনির গাড়ীর কালেকশন তেমন একটা ভালো না হলেও ছেলেটা চুপ থাকতে জানে। পুলিশ চেপে ধরলে খুব বেশী বিপদের আশংকা নেই।সে হিসাবমতোই শুক্রবার রাতে ক্লেমেন্জা আর রকো রওনা হলো ফ্যাট টনির দোকানের উদ্দেশ্যে। রকো ইতিমধ্যেই পুরোন গাড়ির দামের ব্যাপারে খোজখবর লাগিয়েছে। এক বছরের ব্যবহৃত গাড়ী এখন দু’হাজার ডলারের কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ধূর্ত টনি হয়তো কিছু বেশিও নিতে পারে তবে সেটা আড়াই হাজার ডলারের বেশী হবে না। দোকানের সামনে দুজন নামতেই মুখে মোলায়েম হাসি মাখা ফ্যাট টনিকে দেখা গেল।দোকানে বসে নষ্ট করার সময় হাতে নেই ক্লেমেন্জার। আর ফ্যাট টনির সাথে বেশী কথা বলাও নিরাপদ না। কাজেই প্রথমেই অল্প কথায় সব বলে গেল রকো। ক্লেমেন্জা মাঝে মাঝে দু এক কথা যোগ করছিলো। গাড়ির ধরন জানার পর টনি তাদের নিয়ে গেল দোকানের পেছনে কাভার দিয়ে ঢেকে রাখা কিছু গাড়ীর দিকে।“দোকানে এই মূহুর্তে সবচেয়ে ভালো গাড়ী এই তিনটি”, বললো ফ্যাট টনি, “যেকোন দুটি নিতে পারেন নিশ্চিন্তে”। ভূরু কুচকে কাভার উল্টে বেশ ভালো করে দেখলো কিছুক্ষণ ক্লেমেন্জা আর রকো দুজনই। “হুমম, এবার দামটা বলে ফেলো”, গম্ভীর স্বরে বললো পেটমোটা ক্লেমেন্জা। “আহা, এতো অস্থির হচ্ছেন কেন, ভালো করে দেখুন আগে”, বলে চললো টনি, “এইরকম গাড়ী এই পুরো লিটল ইটালীতে আর একটিও পাবেন না। দুটো গাড়ীর জন্য আপনাকে দিতে হবে মাত্র পাচ হাজার ডলার”। কিছুক্ষণ ভাবলো ক্লেমেন্জা, তারপর বললো, “সাড়ে তিন হাজার ডলারের এক পয়সাও বেশী পাবে না”। মুখের মোলায়েম হাসিটা একেবারে অক্ষত রেখে টনি বললো, “আপনি বলেই পাচ হাজার চাইলাম, অন্য কেউ হলে তো ছয় হাজারের এক পয়সা কমেও দিতে পারতাম না। যাই হোক শেষ দাম বলছি চার হাজার, এর নিচে আর সম্ভব না”। “শেষ দাম তিন হাজার ছয়শো”, বলেই গেটের দিকে পা বাড়ালো ক্লেমেন্জা। গেট দিয়ে বেরোবার ঠিক আগ মূহুর্তে টনি বলে উঠলো, “তিন হাজার আটশো, নিয়ে নিন”। তিন হাজার আটশো শুনে রকোর দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো পেটমোটা ক্লেমেন্জা। রকো হালকা মাথা নেড়ে না বলতেই দুজন বেড়িয়ে আসলো দোকান থেকে। গাড়ীতে উঠেই রকোকে চেপে ধরলো পেটমোটা, “তিন হাজার আটশোতে কিনতে কি সমস্যা ছিল? না করলে কেন”? “চার হাজারের নিচে নেমেছে দেখেই না করেছি, চার হাজার বললে ঠিকই কিনতে বলতাম,” বেশ ভারী গলায় উত্তর দিলো রকো।
২.এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক আট সমুদ্র তেরো নদী পাড়ে বাংলাদেশের বুকে বরিশাল জেলার আগৈলঝড়া উপজেলার বাসাইল গ্রামে। রহিম হাওলাদারের দুই ছেলে কালু আর লালু। কালু ছোটবেলা থেকেই ভদ্র আর শান্ত, অন্যদিকে লালু সবকিছুতে উদাসীন। মারা যাওয়ার আগে রহিম হাওলাদার তার দুই ছেলেকে সব জমি, পুকুর , বাড়িঘর সমান ভাবে ভাগ করে দিলেন। একটা পুকুর, চার বিঘা জমি আর একটা ঘর, এই সবকিছু বিক্রি করে দুহাতে টাকা উড়িয়ে নি:স্ব হতে লালু হাওলাদারের সময় লাগলো এক বছর আট মাস। সেই একই সময় কালু হাওলাদার তার চার বিঘা জমিকে বানালো সাত বিঘা। পুরোপুরি নি:স্ব হওয়ার পর ঢাকায় আসা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না লালু হাওলাদারের। ২০০৭ এর ৫ ই মার্চ ঢাকায় আসে লালু। প্রথম কিছুদিন কারওয়ান বাজারে কুলির কাজ করে। তারপর শুরু করে রিকশা চালানো। কিন্তু অত্যাধিক শারীরিক পরিশ্রমে অভ্যস্থ না থাকার দরুণ অল্পদিনেই হাপিয়ে উঠে লালু। এবার শুরু করে দিনমজুরীর কাজ। কাজ করতে করতে প্রায়ই গ্রামের কথা মনে করে চোখের জল ফেলে গোপনে।১৫ই নভেম্বর ২০০৭। শুরুটা অন্যান্য দিনের মতো হলেও শেষটা বড় ভয়ানক ছিলো কালু হাওলাদারের জন্য। সিডরের আঘাতে ৭ বিঘার জমির ফসল প্রায় পুরোটা নষ্ট হয়, ঘরের ভেতর গাছ ভেঙ্গে পড়ে মারা যায় ছোট ছেলেটা। সকাল বেলা প্রতিবেশীরা কালূ ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে ধ্বংসস্তূপ থেকে। শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আর পুত্রশোক কাটিয়ে উঠতে উঠতে লেগে যায় প্রায় এক সপ্তাহ। প্রতিবেশী প্রায় সবার অবস্থাই একই। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু হারিয়ে পর্যূদস্ত। পুরো গ্রামে একমাত্র টিকে থাকা ঘরটা ছিল চেয়ারম্যান রশিদ মোল্লার। প্রাথমিক সাহায্য শুরু হয় তার বাড়ি থেকেই। গমচোর হিসেবে হালকা কুখ্যাতি থাকলেও এতো বড় বিপদে তিনিও চুপচাপ বসে না থেকে গ্রামবাসীকে যথেষ্ঠ সাহায্য করেন। এক সপ্তাহেরও বেশী সময় পর সরকারী সাহায্য আসে গ্রামে। বড় বড় হেলিকপ্টার ঘুরপাক খায় গ্রামের উপরে। নিচে ক্ষুধার্ত মানুষ তৃষ্ঞার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে সরকারী ত্রাণকার্য শুরু হয়। প্রথমেই যে সমস্যাটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে গ্রামবাসীর প্রত্যেকের আলাদা ভাবে ক্ষতি নির্ধারণ। কালূ হাওলাদারের পাশের বাড়িটাই কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লার জমি ছিল ২ বিঘা, পুকুর ছিল না, দুধেল গাই ছিল ৩ টা। সেদিক দিয়ে কালূ হাওলাদারের ৭ বিঘা জমিতে মোট ক্ষতির পরিমাণ কাদেরের চেয়ে ঢেড় বেশী। কিন্তু সরকারী ত্রাণ নেয়ার সময় সবাই সমান। ত্রাণ হিসেবে যা পাওয়া গেল সেটাও পরিমাণে খুব একটা খারাপ না। পরিবার নিয়ে টিকে থাকার জন্য মোটামুটি। কিন্তু মূল সমস্যাটা শুরু হলো পুরোপুরি অপ্রত্যাশিতভাবে। ত্রাণকার্য শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ পর হঠাৎ করে ঢাকা থেকে বেশ বড় একদল মানুষ আসে যারা বিভিন্ন সময়ে এই গ্রাম ছেড়ে নানা কারণে ঢাকা গিয়েছিল। এই দলের সাথেই গ্রামে পুন:রাগমন ঘটে লালু হাওলাদারের। গ্রামে আসার আগে যথারীতি কারওয়ান বাজারে দিনমজুরের কাজ করতো লালু। সেখানেই একদিন খবর পায় যে বরিশালের গ্রামগুলোতে বেশ ভালো পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ করছে সরকার। এবং ত্রাণের পরিমাণ প্রায় ঢাকায় তার দৈনিক আয়ের সমান। এই খবর পেয়ে বিন্দুমাত্র দেরী করেনি লালু। পরিচিত বেশ কয়েকজনকে সঙ্গী করে গ্রামে ফিরে আসে।লালুর এই গ্রামে ফিরে আসাটাকে ভালোভাবে দেখেনি কালু। ভাইয়ের এই বিপদে সাহায্য করতে যে লালু ঢাকা থেকে ছুটে আসেনি সেটা সে জানে ভালো করেই। লালুর আসার কারণটা বোঝা যায় আসার পরদিনই। গ্রামবাসী অন্য সবার সাথে সেও ত্রাণ নেয়ার লাইনে গিয়ে দাড়ায়। গ্রামবাসীরা সবাই তাকে চেনার পরও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না মিলিটারীর ভয়ে। সবার মতো সেও সরকারী ত্রাণের অংশীদার হয় কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয়েও আর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা তাদের প্রাপ্য ত্রাণের ভাগ থেকে হয় বন্চিত। শুধুমাত্র বাসাইল গ্রাম না, এইরকম ঘটনা ঘটেছে বরিশাল, পটুয়াখালি, বাগেরহাটের অনেক গ্রামে। এই ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধান কি হতে পারে?
৩.আবারও দৃষ্টি ফেরানো যাক ক্লেমেন্জা আর রকোর দিকে। ফ্যাট টনির শেষ প্রস্তাবিত দাম ছিল ৩৮০০ ডলার। আর ক্লেমেন্জার বাজেট ছিল ৪০০০ ডলার। তাহলে রকো রাজি হলো না কেন?ধরা যাক একটি পুরোন ভালো গাড়ীর মূল্য সর্বনিম্ন ২০০০ ডলার আর একটি পুরোন খারাপ গাড়ীর(ইংরেজীতে যাকে লেমন বলা হয়) মূল্য সর্বনিম্ন ১০০০ ডলার। যদি একজন ক্রেতার একটি পুরোন গাড়ী ভালো না খারাপ জানার কোন উপায় না থাকে তাহলে যেকোন পুরোন গাড়ীর প্রত্যাশিত মূল্য (২০০০*.৫০+১০০০*.৫০) অথবা ১৫০০ ডলার। কিন্তু একজন বিক্রেতা কখনোই ২০০০ ডলারের নিচে একটা ভালো গাড়ী বিক্রি করবে না। আবার ১৫০০ ডলারে তার পক্ষে শুধুমাত্র একটি লেমনই বিক্রি করা সম্ভব। এই কারণেই রকো ১৯০০ ডলারের প্রস্তাব শুনে রাজি হয় নি।এক্ষেত্রে পুরোন গাড়ীর বাজারের কি হবে? যদি কোনরূপ গ্যারান্টি না দেয়া হয় তবে পুরোন গাড়ীর বাজারই তৈরী হবে না। কারণ ভালো পণ্যের প্রত্যাশিত মূল্য যখন পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম থাকে তখন খারাপ পণ্য সে জায়গা দখল করে। একইভাবে এর বিপরীতটাও সত্য। যেটা ই’বের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে
৪.ফিরে আসি বাসাইল গ্রামে। ক্যাপ্টেন রফিকের চোখে ত্রাণপ্রার্থী লালু আর কালুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আর শহর থেকে ত্রাণের লোভে গ্রামে আসা দিনমজুর তার দৃষ্টিতে এক। ধরা যাক প্রতিদিন একজন ত্রাণপ্রার্থীর জন্য সরকারী বরাদ্দ হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং গ্রামে মোট জনসংখ্যা ১০০০ জন। যদি শহর থেকে অতিরিক্ত ২০০ জন এসে যদি এই ত্রাণে ভাগ বসাতে চায় তাহলে হয় ২০০ জন প্রকৃত গ্রামবাসীকে বন্চিত করতে হবে অথবা ১৫০০০০ টাকাকে ১২০০ ভাগ করে প্রত্যেককে ১২৫ টাকা করে দিতে হবে। অর্থাত সমাধান যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামবাসীরাই।এই সমস্যাটা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত যদি ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব চেয়ারম্যান রশিদ মোল্লার উপর থাকতো।কারণ কালূ আর লালুর মধ্যে কে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ এটা রশিদ মোল্লার পক্ষেই জানা সম্ভব, ক্যাপ্টেন রফিকের পক্ষে না। গ্রাম সরকারের জবাবদিহিতা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে ত্রাণ বিতরণের মতো কাজগুলোতে মিলিটারীর চেয়ে তাদের সফলতার হার অনেক বেশী হবে।
৫.উপরের যে দুটি সমস্যা নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে সেটাকে অর্থনীতির ভাষায় বলে information asymmetry. ২০০১ সালে এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তিন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরষ্কার পান। Information asymmetry নিয়ে বলতে গেলে এ বিষয়ে আমাদের ড: মুহম্মদ ইউনুসের অবদানটাও কিছুটা উল্লেখযোগ্য।বাংলাদেশের একজন গ্রাম্য মহাজন ঋণের উপর বছরে ১৫০% সুদ আদায় করেন। তাহলে এসব ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাংকগুলো কেন ঋণ দিচ্ছে না? কারণ প্রথাগত ব্যাংকের চেয়ে মহাজনের কিছু তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে। যেমন• প্রথাগত ব্যাংকের চেয়ে মহাজনের পক্ষে ছোট ঋণগুলো নিয়ে গ্রহীতার সাথে ভালোভাবে বোঝাপড়া সম্ভব।• মহাজন জানে কার পক্ষে ঋণ পরিশোধ সম্ভব এবং কার পক্ষে সম্ভব না।• মহাজনের পক্ষে ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, যেটা ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব না।উপরের তিনটি সমস্যা – returns to scale, adverse selection এবং moral hazard এর কারণে মহাজনের পক্ষে গ্রামে সুদী কারবারে একটা মনোপলি ধরে রাখা সম্ভব হয়।ড: ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে যাতে উপরের তিনটি সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের পদ্ধতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নিতে ইচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তিকে একসাথে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। যদি ঋণটি অনুমোদন পায় তাহলে ওই দলের দুইজনকে ঋণ দেয়া হবে।ওই দুইজন যদি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে তাহলে দলের আরো দুইজন ঋণ পাবে। এভাবে চলতে চলতে একেবারে শেষে ঋণ পাবে দলনেতা। এই পদ্ধতিতে adverse selection এবং moral hazard এই সমস্যা দুটি অনেকাংশে দূর করা গেছে। আর returns to scale পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয় নি। মূলত এই returns to scale সমস্যাটার কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার এখনো ৪০% এর কাছাকাছি।